Sunday, January 14, 2018

তিনে দুয়ে দশ কী এবং কেন পড়বেন / চয়নিকা জাহান চৌধুরী

তিনে দুয়ে দশ
‘তিনে  দুয়ে দশ’ ড. মোহাম্মদ আমীন-এর লেখা একটি  উপন্যাস। এটি সাধারণ কোনো উপন্যাস নয়, অনবদ্য উপন্যাস। অনবদ্য বলার কারণ আছে। এটি শুধু কথার কথা নয়। নিজের অভিজ্ঞতা হতে লিখিত এই উপন্যাসটি শিশুকিশোর
হতে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার  উপযোগী, সবার মনে দাগ কাটতে সক্ষম। শিশু-কিশোরদের মনমানসিকতাকে আদর্শ চেতনায় জাগ্রত করতে হলে  বয়স্কদের কী করতে হবে,  কেমন হতে হবে এবং কীভাবে করতে হবে সেটি ছাড়াও বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক সমাজের কর্তব্য কী, তা অতি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় অনুপম এক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এর ভাষা এমন কৌশলে চয়িত, যা শিশুকিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের লোককে আলোড়িত করবে। শুধু তাই নয়, এর অন্তর্নিহিত ভাবনা, বাক্যচয়নে সহজ অনুবোধ্যতার সঙ্গে সমস্যার সমাধানভিত্তিক দার্শনিক নির্দেশনা যেমন মুগ্ধকর তেমনি সার্থকর। ভালোবাসা কীভাবে মানুষকে পরিবর্তন করে দিতে পারে এবং ভালোবাসার মাধ্যমে কীভাবে সবাই মহৎ হওয়ার ক্ষেত্র খুঁজে পেতে পারে তার বাস্তবভিত্তিক উদাহরণ উপন্যাসের পাতায় পাতায় বিধৃত করা হয়েছে কিশোর ওমর সুলতান, আকিদ কাদের, মুহিবুল কাদের এবং কিশোরী সেলিমার সঙ্গে তাদের শিক্ষকের আকর্ষণীয় সম্পর্ক আরা শিক্ষামূলক কথোপকথনে।

লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন টিউশনি করতেন। ওমর নামের তাঁর এক ছাত্র ছিল। ছাত্রটি ছিল খুব ডানপিটে, দুষ্ট, বেপরোয়া এবং উচ্ছৃঙ্খল বেয়াদব। সে গৃহশিক্ষকের নিকট থেকে বেতনের কমিশন নিত, তাদের সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করত। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অবহেলাজনক ব্যবহার করত। ওমরের পিতা খুব প্রভাবশালী ছিলেন। তাই স্কুলের শিক্ষক বা স্কুল কমিটি ওমরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করতেন না। এমন অসভ্যতা করত বলে কোনো শিক্ষকই তাকে পড়াত না। পড়াতে এলেও কয়েক দিন পড়িয়ে চলে যেতেন। এমন এক অবস্থা উপনীত হয় যে, কোনো শিক্ষকই তাকে পড়ানোর জন্য পাওয়া যাচ্ছিল না। স্কুলের শিক্ষক এবং সহপাঠীরাও ওমরকে এড়িয়ে চলত। ক্রমশ সে খুব একা হয়ে পড়েছে। লেখকের এক বন্ধু, লেখককে ওমরের গৃহশিক্ষক হওয়ার প্রস্তাব করে। লেখক রাজি হয়।ওমরকে পড়াতে গিয়ে প্রথম দিনেই লেখক হতভম্ব হয়ে পড়েন। ওমরের আচরণ  খুবই রূঢ় এবং অপমানজনক।
বেতনের ৩০% কমিশন চেয়ে বসে সে। লেখক অপমানিত বোধ করলেও মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। দেখা, যাক কী করা যায়। তিনি ওমরকে উচ্ছৃঙ্খল জীবন থেকে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় নিয়ে নেন নিজ মনে। তাই ‍ওমরের সব অপমান কৌশলে হজম করে নিতে থাকেন। ওমর শিক্ষকেকে তার বালিকা-বান্ধবীর জন্য প্রেমপত্র লিখে দিতে বলতেন।  ক্লাসের সবার নিচে ছিল ওমরের স্থান। লেখক তার শিক্ষকের ভার নেওয়ার পর ওমর আরো বেশি উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্য শিক্ষকের মতো লেখক তাকে ছেড়ে চলে যাননি। ভালোবাসা দিয়ে ওমরকে পরিবর্তনের প্রত্যয়ে আরো দীপ্ত হয়ে ওঠেন। আস্তে আস্তে ওমরের পরিবর্তন আসতে থাকে। পরের বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় ওমর শেষস্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়। কীভবে এক বছরের মধ্যে এমন পরিবর্তন সম্ভব হয়েছিল, তা এই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা কিশোর উপন্যাসটি কিশোরদের শুধু আনন্দ দেবে না, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার অনুপ্রেরণাও জোগাবে। সর্বোপরি, কিশোরদের সঙ্গে মা-বাবা পরিবেশের মধ্যে কেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত -- তাও অনবদ্য বাস্তবতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এমন একটি কিশোর উপন্যাস পড়তে পেরে আমি সত্যি বিমোহিত।
অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ

লেখকের জীবন থেকে নেওয়া এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে পুথিনিলয়। পাওয়া যাবে  ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের অমর একুশে গ্রন্থমেলার পুথিনিলয় স্টলে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন। শুধু উপন্যাসটি নয়, ভূমিকাও অনবদ্য। হায়ৎ মামুদের লেখা ভূমিকা পড়লে আপনার অনুভূতিতে অন্যরকম আলোড়ন সৃষ্টি হবে। বইটি পড়লে এবং এর নির্দেশনা মনে গেঁথে নিতে পারলে যে কেউ তার অবাধ্য দুষ্ট এবং যথেচ্ছাচারী উত্তরসুরী কিংবা ছাত্রছাত্রীদের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দিতে পারবে। 

No comments:

Post a Comment