Sunday, January 7, 2018

ওরা এগারো জন/ প্রমিতা দাস লাবণী

ড. মোহাম্মদ আমীন বাংলাদেশের একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক। গবেষক ও ব্যাকরণবিদ হিসেবেও

তার খ্যাতি রয়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, পশ্চিমবঙ্গেও তিনি খ্যাত। তিনি  ‘ওরা এগারো জন’ নামের একটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছেন। বইটির বিষয়বস্তু নতুন না হলেও, ধারণা যেমন নতুন তেমনি অভিনব এবং বাংলা সাহিত্যের বিকাশের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ও স্থায়ী উদ্যোগ বলে আমার মনে হয়েছে। লেখকের মতে, এটি এমন একটি গ্রন্থ যার উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী। এই গ্রন্থে এমন এগার জন লোকের জীবনচরিত ও কীর্তির বর্ণনা করা হয়েছে, যারা পরিশ্রমী, প্রতিভাবান এবং আপন চিন্তাজগতে বিস্ময়করভাবে তুলনাহীন। বইটি প্রকাশের  উদ্দেশ্য নিয়ে বিষয়ে লেখকের সঙ্গে যে আলাপ হয়েছে, সে আলাপ এবং বইয়ের ভূমিকার বিষয়বস্তু একিভূত করে নিচে তুলে ধরা হলো।


‘ওরা এগারো জন’ এমন একটি গ্রন্থ যে গ্রন্থে কবি-সাহিত্যিক হিসেবে স্বল্পপরিচিত কিন্তু প্রখর মেধা শক্তি এবং অনবদ্য সৃজনশীল সক্ষমতার অধিকারী  এগার জন মেধাবী ব্যক্তির সাহিত্যকর্ম, জীবনাচরণ, আদর্শ ও মূল্যবোধ-সহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থে যাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাঁরা  হলেন : 

১. ভূইয়া সফিকুল ইসলাম : কাব্য-স্নিগ্ধের নিপাট মুগ্ধতা
২. রতন সিদ্দিকী : অনুভবের বোদ্ধা সংস্কৃতির কুসুম
৩. লিয়াকত আলী : জীবনাভিজ্ঞতার নিপুণ ঋদ্ধতা
৪. নাওমি ওয়াতানাবে : পরিশুদ্ধ বাংলায় বিশুদ্ধ জাপানি
৫. মোহাম্মদ সরওয়ার হোসাইন আজিজ : মুগ্ধকর স্নিগ্ধতা
৬. শাহাদাত হোসাইন শাহালাস্কুয়াস : অনুপম শিল্পী কবির সত্তরোর্ধ শিশু সত্তা
৭. শামসুল আলম সেলিম : কবিতার তৃপ্তি সারল্যের দীপ্তি
৮. এম এল গনি : জীবনবোধে উদ্দীপ্ত প্রমুগ্ধ দার্শনিক
৯. সালাহউদ্দিন আহাম্মদ : প্রেম দ্রোহে শব্দ সজাগ কবি
১০. পূর্ণা রায় : ভালবাসার প্রৈতি মুগ্ধতার প্রীতি
১১. সুভাষ সর্ব্ববিদ্যা,  কাব্য-গল্পে বাস্তবতার নির্ঝর প্রসারতা

এরা খুব প্রসিদ্ধ কেউ নন। তবে অখ্যাতও নন। প্রত্যেকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং নিজের কর্ম-পরিমণ্ডলের বাইরে গিয়ে আদর্শ ও মানবতাবোধ লালনের জন্য সৃজনশীল কর্মে নিয়োজিত হয়েছেন। এই এগার জনের সবার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ও নেই। অনেককে কখনও দেখিওনি। কারো পুস্তক পরে কারো বা ফেসবুক আইডির লেখা পড়ে  তাঁদের সম্পর্কে আমার মাঝে যে মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, সেই মুগ্ধতাই আমাকে তাঁদের নিয়ে এই গ্রন্থটি লেখার প্রেরণা দিয়েছে। তবে খুব বিখ্যাত না-হলেও তাঁদের সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম এবং জীবনদর্শন আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাঁদের স্বার্থহীন উদার মননশীলতা আমার মনে এই অনুভবের সৃষ্টি করেছে যে, স্বল্প খ্যাত এসব ব্যক্তিবর্গ নিয়ে কিছু লেখা উচিত। যাতে তাঁরা উৎসাহিত হন, তাদের সৃজনশীল ক্ষেত্র বিকশিত হওয়ার পথ সুগম হয় এবং আরো অনেকে এমন কাজে এগিয়ে আসেন।  অধিকন্তু প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির পথও যেন সুগম হয়।

এগারো জনের মধ্যে নাওমি ওয়াতানাবে জাপানি মহিলা। জাপানি হয়েও তিনি বাংলায় সাহিত্যকর্ম করে যাচ্ছেন। প্রাক্তন
ড. মোহাম্মদ আমীন
এমপি লিয়াকত আলী দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বর্তমান প্রজন্মের বাঙালিদের কাছ
থেকে যাতে বাংলা হারিয়ে না যায়, সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।  শিল্পী কবি শাহাদাত হোসাই শাহলাস্কুয়াস একাধারে শিল্পী ও কবি। তিনি প্যারিসে বসে বাংলায় কবিতা লিখেন, ফেসবুকে প্রচার করেন এবং তাঁর অনবদ্য শিল্পকর্মের মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তার ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করার লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। তরুণ কথাসাহিত্যিক এম এল গনি কানাডা নিবাসী প্রকৌশলী। প্রকৌশলী হয়েও তিনি ইতোমধ্যে কথাসাহিত্যে নিজের কৃতিত্বের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘কচি চেহারার বিড়ম্বনা’ দিগন্তধারা সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। বাকিরা বাংলাদেশে থাকেন। তন্মধ্যে,   ভূইয়া সফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন সচিব। তিনি একধারে কবি, গীতিকার, গায়ক, সুরকার ও রবীন্দ্র গবেষক হিসেবে অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। বাকি ছয়জনের প্রত্যেকেও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আপন প্রতিভায় দীপ্তমান। এরপরও সবাই দেশীয় সাহিত্য-সংস্কৃতির লালন-পালন এবং ঐতিহ্য বিকাশের জন্য নিজেদের প্রতিভাকে নিবেদিত করেছেন। এমন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিবর্গের স্বীকৃতি প্রয়োজন। তাঁরা স্বীকৃতি ব্যক্তি নয়, পক্ষন্তরে জাতি উপকৃত হবে। বিকশিত হবে এরকম আরো হাজার হাজার প্রতিভা, যারা উপযুক্ত ক্ষেত্রের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছেন। 

পুস্তকে বর্ণিত এগারো জনের সাহিত্যকর্ম, জীবনদর্শন এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলোচ্য গ্রন্থের বিষয়বস্তু। তাঁদের লেখায় এবং কর্মকাণ্ডে আমি যে প্রতিভার পরিচয় পেয়েছি, তা সংক্ষেপে আমার সীমিত প্রকাশ-সামর্থ দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে। আমি মনে করি, এই এগার জন শুধু নন, এরকম আরো অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি আমাদের চারিপাশে রয়েছে, যারা নামে খ্যাত কিন্তু আপন সৃজনশীল কর্মে অনেক উঁচু মাপের বিকাশস্ফুরণ,  আপন জগতে বেশ সযত্নে আন্তরিকতার সঙ্গে লালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে প্রায় সবাই  হারিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, আমার এই লেখা তাদের সৃজনশীল কর্মে উৎসাহিত করবে। 

প্রতিভার যথাযথ মূল্যায়ন না হলে প্রতিভার সৃষ্টি হয় না। পাথরে পড়ে থাকলে অতি উন্নত বীজও নষ্ট হয়ে যায়। উপযুক্ত
ড. মোহাম্মদ আমীন-এর নতুন বই।
পরিবেশ না পেলে অতি উত্তম বীজও অনঙ্কুরিত থেকে যায়। অঙ্কুরিত হলেও উর্বর ক্ষেত্র, আবশ্যক উপাদান এবং উপযুক্ত পরিচর্যা না পেলে তা ফুলে-ফলে বিকশিত হওয়ার আগে মরে যায়। তাই কোনো ব্যক্তি শুধু প্রতিভাবান হলে হয় না, বিকাশ বা খ্যাত হওয়ার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা আবশ্যক। উপযুক্ত ক্ষেত্র এবং পরিচর্যার অভাবে অত্যাবশক-ক্ষেত্রহীন উত্তম বীজের মতো অনেক প্রতিভাবান শুধু উপযুক্ত লালনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। যদি  অখ্যাত এই প্রতিভাবানদের তুলে ধরা যায়, তাহলে তারা নিজেদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র খুঁজে পাবেন। ‘ওরা এগার জন’ গ্রন্থের মাধ্যমে এই প্রয়াসের সূচনা করা হলো।  শুভানুধ্যায়ী এবং পাঠকবর্গ-সহ সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।

 এটি এ বিষয়ে প্রথম প্রয়াস। এমন অখ্যাত প্রতিভার সন্ধান পেলে সাড়া পেলে প্রতিবছর  তাদের নিয়ে  এরূপ গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ অব্যাহত রাখব। এ বিষয়ে সহৃদয় পাঠক তথ্য দিয়ে আমাকে সহায়তা করতে পারেন। আমার লেখায় যদি একজন ব্যক্তিও বিখ্যাত হওয়ার ক্ষেত্র এবং লালিত হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ পান তাহলে আমার শ্রম সার্থক হবে।

No comments:

Post a Comment