Monday, February 1, 2016

কুপোকাত /এম এল গনি

কুপোকাত ==


মানুষের নামের সাথে তার স্বভাব-চরিত্র যে মাঝে মাঝে মিলে যায়, তার এক বড় দৃষ্টান্ত আমাদের সহপাঠি নীরব | ক্লাস সেভেনে পড়ে কেবল | এখনই কেমন গম্ভীর; কতকটা বয়স্কদের মতোই ধীরস্থির, চিন্তাশীল | ওর কাছের বন্ধু বলতে ওই একজনই; স্বপন | পুরনো
একটা গাড়ি আছে ওদের | বাবা গাড়িটা চালিয়ে রোজ সকালে নিয়ে আসেন স্কুলে | বিকেলে ড্রাইভার চাচ্চু এসে নিয়ে যান ওদের দুজনকে | যেন এক পরিবারের দুই সহোদর | ওরা দু'জন যে আপন ভাই, বা কাজিন নয় তা স্পষ্ট হয়েছে ক্লাস সেভেনে উঠারও  কিছু পরে | পুরো ক্লাস সিক্স মনে করেছিলাম নীরব আর স্বপন আপন দু'ভাই | মনে করবো নাই বা কেন, এক গাড়িতে একসাথে স্কুলে আসে, যায়, একসাথে বসে দুপুরের খাবার খায়, প্রাইভেট টিউটরের কাছে যায় একসাথে | ওদের জন্মও নাকি হয়েছে এক পাড়ায় | সহোদরের চেয়ে কম কিসে ওরা দুজন? - নীরব আর স্বপন |

ক্লাস সেভেনে উঠেছি আমরা | বাংলা ব্যাকরণের ক্লাস চলছে মোস্তাক স্যারের | স্যার আবার খুব কড়া মেজাজের মানুষ | ক্লাসে দুষ্টামি করা তো বহু পরের কথা, পারতপক্ষে প্রস্রাব করতেও যায় না কেউ | কোন কারনে বাথরুমের বেগ পেলেও পরের ক্লাসের সময় যাবো বলে চেপে রাখি | এমনই অবস্থা | স্যার আমাদের একটা ভাব্সম্প্রসারনের কাজ দিয়ে কিছুটা ঝিমিয়ে নিচ্ছেন | বিশ মিনিট পর চেক করে দেখবেন আমরা কে কি করেছি, না করেছি | মিনিট দশেক যেতেই সে কি গন্ধ | বুঝতে বাকি নেই, আমাদেরই কেউ একজন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়েছে ক্লাসরুমের ভেতরেই | সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করে দিলাম 'তাকে' খুঁজে বের করতে| অনেকেই মনে করেছিল 'সিঙ্গারা' উপাধি পাওয়া আমাদের সেই বন্ধুই এ ঘটনার জন্য দায়ী | কিন্তু না, এবার দেখছি 'সিঙ্গারা' নিজেও 'কালপ্রিট' খুঁজতে ব্যস্ত | গন্ধটা শেষতক মোস্তাক স্যারের নাকেও গেলো |

স্যার প্ল্যাটফর্মের উপরে বসানো চেয়ার থেকে নেমে এসে এদিক ওদিক তাকাতেই বুঝে ফেললেন 'প্রকৃত অপরাধী' কে | অভিজ্ঞ চোখ স্যারের | স্বপনই এবারের ঘটনার নায়ক | নাকে হাত দিয়ে ক্লাসরুম থেকে যে যার মত বেরিয়ে গেলো | স্যার অফিসে খবর দিয়ে দফ্তরী সফি চাচাকে ডেকে এনে ওই জায়গাটা পরিস্কারের ব্যবস্থা করলেন | আর, ধোয়ার জন্য স্বপনকে বাথরুমে পাঠানোর সময় আমাদের কেউ একজনকে ওর সাথে যাবার অনুরোধ জানাতেই স্যারের চোখ এড়াতে আমরা সবাই ধীরে ধীরে দুরে সরে যেতে শুরু করলাম | প্রতিক্রিয়াহীন কাছে দাঁড়িয়ে রইলো কেবল ওই বোকা নীরব | ও-ই  সেদিন মোস্তাক স্যারকে আগ বাড়িয়ে বলেছিল, স্যার, স্বপনের সাথে আমি যাবো | দেখুন বন্ধুরা, এইটুকুন বাচ্চার বন্ধুবাত্সল্য কতো উঁচু পর্যায়ের | হয়তো ওটুকু বয়সেই নীরব জেনে গেছে, দাওয়াতের বন্ধু নয়, দু:সময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু |

আরেকদিনের কথা | অঙ্কের বাড়ির কাজের খাতা স্কুলে নিয়ে আসতে ভুলে গেছে স্বপন | কি বিপদ ! অঙ্কের টিচার সাত্তার স্যার যদি ভুলে যাবার বিষয়টা বিশ্বাস না করেন, তাহলে নির্ঘাত শাস্তি | কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ক্লাসে সবার সামনে; ক্লাসের পুরো সময় | নিমেষেই বুদ্ধি এঁটে ফেল্লো স্বপন | কুটবুদ্ধিতে ওর জুড়ি নেই | ফিসফিসিয়ে কি যেন বলল নীরবের কানে | তার খানিক পরেই দেখি নীরব বলতে শুরু করলো, সেও নাকি অঙ্কের বাড়ির কাজের খাতা ফেলে এসেছে বাসায় | আমাদের কেউ বিশ্বাস করলো, কেউ করলো না | কারণ, নীরব ক্লাসের প্রথম তিনজনের একজন, আর স্বপন নবম কি দশম | দু'জনই ভালো ছাত্র, তবে নীরবের খ্যাতিটা আলাদা | স্বপন বাড়ির কাজের খাতা ভুলে গেলেও যেতে পারে; কিন্তু, নীরব ভুলবে এটা ভাবা একপ্রকার অসম্ভব | স্যার শুনলে সত্যি ভেবে ওকে মাফ করে দেবেন অনেকটা নিশ্চিত | আর, এ সুযোগে মাফ পেয়ে যাবে স্বপনও | স্বপনের মাথায় চিন্তা ভাবনা এরকমই | পরিকল্পনাটা বুঝে ফেলেছে অনেকেই | না জানি, এই স্বপন বড় হয়ে যে কি হয় ! বড় কোনো উকিল-টুকিল হবে হয়তো বা |

দু'বন্ধু স্কুল, কলেজ একসাথে শেষ করে বুয়েটেও পড়েছে একসাথে | অতপর, বুয়েট পাশ করে চাকুরী জীবন | বছর দুয়েক চাকুরী করতেই স্বপনের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা যাবার সুযোগ হয়ে গেলো | স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মাস্টার্স করতে গেলো আমেরিকার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে | ভালো রেজাল্ট করে পিএইচডি প্রোগ্রামেও ভর্তি হয়েছে সে | এরই মাঝে নীরবও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হবার খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে | ওর কিছুটা দেরী হবার কারণ, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে সে | তাই, মা তাকে কিছুতেই ছাড়তে চাইছিলেন না | কিন্তু, বাংলাদেশে অসুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশে চাকুরি চালিয়ে যেতে তার অনীহা বুঝতে পেরে শেষতক মাকে তাঁর মূল অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছে | অনেক ভেবেচিন্তে তিনিও বুঝেছেন, উন্নত দেশের স্বচ্ছ পরিবেশই নীরবের মেধা বিকাশে অধিক সহায়ক হবে | এও বুঝেছেন, ছেলের ভবিষ্যতের চেয়ে মাতৃস্নেহ বড় হতে পারে না |

মাত্র ক'মাস চেষ্টা তদ্বির চালাতেই তিনচারটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার পেয়েছে নীরব | ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি রেন্কিংয়ে কিছুটা নিচে থাকা এক বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ক্লাসের শুরু থেকেই ফুল স্কলারশিপ অফার করলেও হুড়মুড় খেয়ে পড়ার মতো ছেলে না এ নীরব | দূরদর্শী সে | ও জানে রেন্কিং বিবেচনায় একটু উপরের লেভেলের ইউনিভার্সিটির দামটা একেবারেই অন্য রকম | তাই, স্বপন যে ইউনিভার্সিটিতে গেছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন অফারটা আর্থিক দিক থেকে খুব বেশি আকর্ষনীয় না হলেও ওখানেই ভর্তি হবার সুপ্ত ইচ্ছে নীরবের | এছাড়াও ওর ছোটবেলার বন্ধু যেহেতু ওই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে বর্তমানে পিএইচডি করছে, তাই, তার কাছ থেকেও অনেক রকম সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যাবে, নিশ্চিত | মাথায় এরকমই নানা হিসেব নিকাশ, চিন্তা ভাবনা নীরবের |

বন্ধুরা, আপনাদের যাদের উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদনের, বা ভর্তি হবার অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা নিশ্চয়ই অবগত, ভর্তি প্রক্রিয়ায় রেফারেন্স লেটার একটা বড় ব্যাপার | সাধারনত দু' বা তিনটে রেফারেন্স লেটার লাগে | একটা কোনো প্রাক্তন প্রফেসরের কাছ থেকে, চাকরি করলে সুপারভাইজার, বা এমপ্লয়ারের কাছ থেকে একটি, বাকিটা কোনো সহপাঠি বা, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নিলেই চলে | বন্ধুর রেফারেন্সটা সঙ্গত কারণেই নীরব ওর বাল্যবন্ধু স্বপনের কাছ থেকেই নিয়েছে | এদিক থেকে বেশ সুবিধেই হয়েছে নীরবের | কারণ, স্বপন শুধু তার বন্ধুই নয়, সে ওই একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে বর্তমানে ডক্টরাল কেন্ডিডেট | তাই, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওর রেফারেন্সের গুরুত্বই আলাদা | ওর রেফারেন্সে কোন ভালো স্কলারশিপও হয়তো নীরব পেয়ে যেতে পারে | ক'জন আবেদনকারীর আর এরকম একজন কাছের মানুষ এমন মোক্ষম জায়গায় সাহায্য করার জন্য এভাবে বসে আছে? এদিক থেকে নীরবকে খুব সৌভাগ্যবানই বলতে হয় | বিষয়টা নীরবকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ ভর্তির ব্যাপারে ভিন্নমাত্রার আত্মবিশ্বাসও যুগিয়েছে | 

টোফেল, জিআরই, একাডেমিক রেজাল্ট, সবকিছুতেই নীরব স্বপনের চেয়ে এগিয়ে | তার উপর আছে প্রভাবশালী বন্ধুর রেফারেন্স | তবুও ফার্স্ট সেমিস্টারের জন্য ফুল স্কলারশিপ পায় নি সে | বিশ্ববিদ্যালয় ওকে আপাতত আংশিক বৃত্তি, বা ফান্ড দেয়ার অঙ্গীকার করেছে | ফুল বৃত্তি দেয়া হবে তার প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, মানে, দ্বিতীয় সেমিস্টারে | এডমিশনের শর্ত এরকমই | ফুল বৃত্তি না পাওয়ার ব্যাপারে স্বপনের সাথে আলাপ করে নীরব জানতে পেরেছে, আগের চেয়ে আজকাল ভর্তি প্রক্রিয়া, তথা বৃত্তি পাবার বিষয়গুলো অনেক কঠিন হয়ে গেছে | আবেদনকারী অনেক বেশি; তাই প্রতিযোগিতাও বেড়ে গেছে | সে যাই হোক, অনেক ভেবে চিনতে নীরব স্বপনের ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই যেতে মনস্থির করলো | নামী বিশ্ববিদ্যালয় বলে কথা | এখান থেকে ভালোভাবে পিএইচডি সম্পন্ন করতে পারলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে না হলেও এটার নিচের রেম্কিং কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে তো একটা একাডেমিক পজিশন ভাগ্যে জুট যাবে, তা হলফ করেই বলা যায় | আর, রেংকিং-এ এর নিচে থাকা ইউনিভার্সিটি তো নর্থ আমেরিকায় গন্ডায় গন্ডায় | আংশিক বৃত্তি মানে তাকে সপ্তাহে দশ-পনের ঘন্টা কাজ করতে হবে, এ আর তেমন কি ? বিস্তর অংক কষে শেষমেষ নীরব স্বপনের বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হলো |

আংশিক বৃত্তির টাকা দিয়ে থাকা, খাওয়াপড়া, টিউশন ফি, সব খরচ সামলানো অসম্ভব | সপ্তাহে নিদেনপক্ষে পনের ঘন্টা কাজ না করলেই নয় | কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আপাতত কোনো কাজ নেই | সচরাচর এমনটিই হয় | প্রথম প্রথম বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্ররা এসে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছুদিন রেস্টুরেন্টে, বা কোথাও পার্ট টাইম কোন কাজ জুটিয়ে নেই | পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটা কাজ পেয়ে যায় | তাছাড়া, দেশ থেকে আসা অনেক ছাত্রই নতুন নতুন আমেরিকা-কানাডা এসব উন্নত দেশে পড়াশোনা করতে এসে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে নিতে রীতিমত হিমশিম খায় | তার দুটি প্রধান কারণ হলো, মা বাবাসহ কাছের সব আত্মীয় স্বজনকে ফেলে আসার মনোবেদনা, আর, কাজ করে পড়াশোনা করার পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব | আঠার বছর পুরোলেই উন্নত দেশের ছেলেমেয়েরা নিজের পায়ে নিজে দাঁড়িয়ে পথ চলতে শুরু করে | বাবা মার কাছ থেকে পারতপক্ষে টাকা পয়সা নেয় না | অন্যদিকে, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বিশ-ত্রিশ পেরিয়েও বাপের হোটেলে খেয়েপড়ে মা বাপের উপর পোদ্দারি করে চলে | কোনভাবে টেনেটুনে মাধ্যমিক পাশ করতে পারলেই তারা মনে করে একমাত্র 'অফিসারি' ছাড়া অন্য কোনো কাজ তারা করতে পারবে না | কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে যে কেউ যে কোন কাজ করে নির্দ্বিধায় | ওসব দেশের ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের এ এক বড় পার্থক্য | 

নীরব বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছে নতুন দেশের নতুন পরিবেশের সাথে | স্মার্ট আর কাকে বলে ! স্বদেশ ছেড়ে এলেও মা বাবার পরামর্শ মেনেই সবকিছু করছে এখনোও | মাস তিনেক পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্টের কিচেনে কাজ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা পার্ট টাইম জব পেতে খুঁজে তার তেমন কষ্ট হয় নি | পড়ালেখায় কৃতিত্ব দেখিয়ে সুপারভাইজারের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে ও | একদিকে ওকে বৃত্তির টাকার পরিমান বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড রুমে কাজ করার ও সুযোগ দেয়া হয়েছে সপ্তাহে পনের ঘন্টা করে | এ চাকুরীর সুযোগে নীরব এখন ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল, ব্যক্তিগত তথ্যাদি, আবেদনপত্র, রেফারেন্স লেটার, সবই দেখতে সক্ষম | 

কৌতুহলের বশে একদিন সে নিজের আবেদনের ফাইলটাও খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে | এক পর্যায়ে রেফারেন্স লেটারগুলোর দিকেও তার চোখ গেল | যেহেতু, এসব লেটার মুখবন্ধ খামে সিল করে তার হাতে বিভিন্নজন দিয়েছিলেন, এসব দেখার সুযোগ এর আগে কখনো হয়নি | তাই, চিঠিগুলো পড়ে দেখতে বাঁধভাঙ্গা আগ্রহ জাগলো মনে | বিশেষত, মিস্টার স্কট তার ব্যাপারে কি লিখেছেন না লিখেছেন তা জানতে তার মনটা উদগ্রীব ছিল অনেক আগে থেকেই | কারণ, এই সাদা ভদ্রলোকের সাথে একটা প্রজেক্টে মাত্র আটমাসের মত কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তার | আটমাসে উনি তার সম্পর্কে কতটুকুই বা জেনেছেন | তার উপর, সাদাদের একটা অংশ তো আবার রেসিস্ট | তাও ওর মনে আছে | এসব বিষয় মাথায় রেখে সে মিস্টার স্কট-এর চিঠিটাই খুলল সবার আগে | 

চিঠিটা পড়ে স্কট সাহেবের প্রতি তার সন্দেহ বা ঘৃনা তো অনেক পরের কথা, বরং নিমেষেই ভক্তি বেড়ে গেলো শতগুনে | পুরো এক পৃষ্ঠার চিঠির উপসংহারে তিনি লিখেছেন, '.. দেশ বিদেশে আমার দীর্ঘ চাকুরীর অভিজ্ঞতায় নীরবের মত এমন ক্রিয়েটিভ, হার্ডওয়ার্কিং, এবং টেকনিক্যালি সাউন্ড, ইয়ংম্যান খুব বেশি দেখিনি | তাকে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল স্কলারশিপসহ অধ্যয়নের সুযোগ দেয়া হলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্মান বয়ে আনবে... '| তারপর সে দেখল তার বুয়েটের সরাসরি টিচার মকবুল স্যারের রেফারেন্স | এটা ঠিক তেমনই, ও যেমনটি আশা করেছিল | তারপর বন্ধু স্বপনের চিঠিটা পড়তেই ওর হার্টফেল করার অবস্থা | বন্ধু লিখেছে, 'আবেদনকারীকে আমি খুব ছোটবেলা থেকেই জানি | তার সাথে আমি প্রাইমারি স্কুল থেকে বুয়েট পর্যন্ত একসাথে পড়েছি | আমার বিবেচনায়, সে একজন গড়মানের ছাত্র | এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষার ফলাফল দেখে তাকে বৃত্তি প্রদানের বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে |' এডমিশন কমিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে স্বপনের চিঠির উপর এ যুক্তিতে, স্বপন আবেদনকারী (নীরব)-কে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য চেনে-জানে, এবং রেফারেন্স দাতা (স্বপন) নিজেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি ক্যান্ডিডেট | - অথচ, স্বপনের রেফারেন্সটাও ভালো হলে ওর ফুল স্কলারশিপ পাওয়া ঠেকাতো কে? দুর্ভাগ্য নীরবের | 

বাল্যবন্ধুর দেয়া এ রেফারেন্স লেটার পড়ে রাগে-ক্ষোভে-অপমানে নীরবের নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়ে ফেলার অবস্থা | শরীর মনের কাঁপনে এক ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার চারিদিকে | সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা দেখছে সে | ওর মনে হতে লাগলো, সাড়া ঘরের ফাইলগুলো থেকে কাগজপত্রসব বেরিয়ে এসে টুকরো টুকরো হয়ে ছিঁড়ে পড়ছে আপনিতেই | টুকরোগুলো বাতাসে উড়ে উড়ে ওর চোখের সামনে নাচানাচি করে কেমন যেন বিদ্রুপমাখা অবজ্ঞা, বা বিদ্রুপের হাসি হাসছে | মাথার উপরের পাকা ছাঁদ, আর ঘরের মেঝে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, আশপাশে সারিবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা বুককেইসগুলোও তার দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে গগন বিদারী অট্টহাসির আওয়াজ  | অন্তরের ভেতরে লালিত এতকালের স্বপ্নচারিতা ভেঙ্গে নিমেষেই খান খান হয়ে গেলো | 

কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সে বাথরুমের দিকে চলে গেলো দ্রুত পায়ে হেটে | অভিমানে কাঁদলো অঝোর ধারায় | নীরব ভেবে কুল পায় না, যে স্বপন ছাত্রজীবনের কোনো পর্যায়েই তাকে অতিক্রম করতে পারেনি সে কি করে বলে নীরব একজন গড়মানের ছাত্র | তাছাড়া, সে না ওর সেই ন্যাংটোবেলার বন্ধু ! এসবের কি কোনো মূল্য নেই স্বপনের কাছে? স্বপন নামের ছেলেটা কি তাহলে আশপাশের আর দশজনের মতো রক্তমাংসে গড়া কোনো মানুষ না? - কোনো প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পায় না নীরব | বুকভরা কান্নার মাঝেই আজ এত্তসব জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেরে, বিদেশ বিভুঁয়ে, একা | জনারণ্যেও বড় একা |

মোটামুটি সুস্থির হয়ে এক সময় নীরব মেনে নেয় সবকিছু | নিজেকে এ বলে বোঝাতে চেষ্টা করে, 'বাস্তবতা হয়তোবা এমনই; ভালবাসা, বন্ধুত্ব, সবই কল্পনা, মরীচিকা কেবল |' এও ভাবে, স্বপন তো এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পিএইচডি করছে | যতদিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা হবে, প্রতিদিনই তার সাথে এক, বা একাধিকবার দেখা হবে | তবে কি স্বপনের সাথে কথা বলে এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার আদলে রেফারেন্স লেটার লেখার ব্যাখ্যা চাইবে নীরব? আবার, এ চিন্তাও ওর মনে আসছে, স্বপন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি করছে বলে তার সাথে ডিপার্টমেন্ট-এর প্রফেসরদের সাথেও একটা ভালো যোগাযোগ আছে | এ অবস্থায় ওকে কোনভাবে ক্ষেপিয়ে তোলা বুদ্ধির কাজ হবে না | এছাড়া যা হবার তো হয়েই গেছে | এখন আর ওসব নিয়ে ঝগড়া করে কাজ কি ? যে ক্ষতি এরই মাঝে হয়ে গেছে তা কি আর পুষিয়ে নেয়া সম্ভব ? নানা ভালোমন্দ ভাবনা আসছে নীরবের মনে | বাস্তবতার এমন কঠিন পরীক্ষার মুখে আর কখনো পড়েনি সে | শেষমেষ ব্যাপারটা চেপে যাওয়াই শ্রেয় ভাবলো নীরব |

বন্ধুরা, ছোটবেলার এতো বন্ধুবান্ধব থাকতে আজ এতকাল পর কেবল এ বিশেষ দু'বন্ধুর কথা আমার এভাবে মনে পড়ার একটা বিশেষ ও জটিল কারণ আছে কিন্তু | সে কাহিনীই শুনুন এবার |

ক'দিন আগে আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে টেলিফোন পেলাম আমাদের পাশের গ্রামের এক যুবক গোলাম কিবরিয়া'র | কিবরিয়ার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় আমাদের গ্রামের বাড়িতেই | বছর আটেক আগে যখন দেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন ওর মা বাবা ওকে নিয়ে এসেছিলেন আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে | ছেলেকে পড়ালেখায় উত্সাহ জোগাতে ওর মা বাবা নাকি আমার ছাত্রজীবন সম্পর্কে অনেক গল্প করেছে তার কাছে | তাই, আমি দেশে গিয়েছি শুনে আমাকে এক নজর দেখার জন্য কিবরিয়ার মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে | ক্লাস এইটে পড়ত তখন ছেলেটা | সাক্ষাতের সময় আকারে ইঙ্গিতে ওর মা এও বুঝিয়ে দিলেন যে ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট টিউটরের কাছে ক'মাস পড়তে পারলে ও অনেক ভালো করবে পরীক্ষায়; কিন্তু, চার বাচ্চার সংসারে টিউটরের টাকা যোগারের সমস্যা | তাই, এককালীন কিছু অর্থ সাহায্যও ওদের দিয়েছিলাম | এর পর থেকে আর কখনো যোগাযোগ হয়নি কিবরিয়াদের সাথে | প্রায় এক দশক পর নিউইয়র্ক থেকে সেই কিবরিয়ার ফোন পেয়ে আমারও খুব আগ্রহ হলো তার সাথে কথা বলতে, তার ভালোমন্দ জানতে |

কিবরিয়া আমেরিকায় এসেছে ডিভি লটারি জিতে | দেশে রসায়নে অনার্স পড়ার পাশাপাশি ই.পি.জেড.-এর একটা কোম্পানিতে পার্টটাইম কাজ করছিল | তারপর আমেরিকায় এসে কম্পিউটারে একটা কোর্স করে চাকুরী শুরু করেছে কিছুদিন আগে | বোঝাই যায়, বেশ গুছানো, লক্ষ্যকেন্দ্রিক, আর পরিশ্রমী ছেলে | নানা কথার ফাঁকে ও বললো প্রায় দু বছর আগে ওর আমেরিকা আগমনের শুরুর দিকের দিনগুলোর কথা |

কিবরিয়ার এক দুরসম্পর্কের কাজিন রশিদ থাকে এক বাঙালি ভদ্রলোকের বাসার বেসমেন্ট, মানে, মাটির নিচের তলায়, ভাড়া নিয়ে | রশিদও কিবরিয়ার মতই ডিভি লটারি জিতে আমেরিকায় এসেছে ওর বছর দু'য়েক আগে | পরিচয়ের সুত্র ধরে কিবরিয়া আপাতত রশিদের ওই বেসমেনটেই উঠেছে | বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করা হবে কিবরিয়া শেষতক রশিদের সাথে এ বাড়িতেই থাকবে না অন্য কোথাও চলে যাবে | পরদিন উইকেন্ড, শনিবার | রশিদের পরিকল্পনা, সকালে বাড়িওয়ালার সাথে বাংলাদেশ থেকে নতুন আসা কিবরিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এ ব্যাপারে আলাপ করবে ও | কিন্তু তার আগেই, রাত দশটার দিকে বাড়ির মালিক এসে রশিদের ঘরের দরজায় টোকা দিতে শুরু করলেন | জেটলেগের কারণে কিবরিয়ার অর্ধচেতন অবস্থা | রশিদ আস্তে আস্তে দরজা খুলে রুমের বাইরে যেয়ে মালিকের সাথে ফিস ফিস করে কথা বলে জানিয়ে দিলো কিবরিয়ার এখানে থাকা না থাকা নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা | 

মালিক সব শুনে মন্তব্য করলেন, সমস্যা নেই রশিদ সাহেব | উনি আমার এখানেও থাকতে পারেন, বা বাইরেও থাকতে পারেন, তাতে কোন সমস্যা নেই | উনি যেভাবে সুবিধা মনে করেন তা-ই করবেন, এটা তাঁর পছন্দ | তবে, আমার এখানে আজকের রাতসহ যে কটা দিন উনি থাকবেন তার জন্য প্রতি রাতে তিরিশ ডলার করে আপনি আমাকে দেবেন | ভদ্রলোক দেশ থেকে নতুন এসেছেন, আমি উনার সাথে টাকা পয়সার কথা বলে তাঁকে বিব্রত করতে চাই না | 

পরদিন সকালের নাস্তা সারার পর কথাগুলো কিবরিয়াকে জানাতেই ওর চোখ কপালে উঠার অবস্থা | ও ভেবে তাজ্জব হলো, 'কি ব্যাপার? আমেরিকার মানুষ না এন্তার ডলারের মালিক ! এদেশের এক ডলারে না বাংলাদেশের আশি টাকা হয়ে যায়? কিন্তু এসব এখন কি শুনি ? একজন স্বদেশী এত দূর থেকে একটা সম্পূর্ণ নতুন দেশে, নতুন পরিবেশে কেবল এসেছে; একেবারে প্রথম রাত থেকেই তাঁর কাছে বাড়ি ভাড়া চাইতে হয়? এর চেয়ে তো কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের বস্তিতে খেয়ে না খেয়ে থাকা মানুষগুলো অনেক উদার | মনে হয় না ওখানে যেয়ে কোনো আমেরিকাবাসী দু'একদিন থাকলে এমন নির্লজ্বভাবে ওরা ভাড়াটারা চাইবে |' কিবরিয়ার মনে এ চিন্তাও এসেছে, ভোগসর্বস্ব দেশের মানুষ এরা | মানুষ নামের এ প্রানীগুলো বাস্তবে পুঁজিবাদী সমাজের সৃষ্ট অনুভুতিশুন্য মূড় জানোয়ার | ওর গা শিউরে উঠে এ ভেবে, তার নিজের মনের অবস্থাও কি একদিন এ পরিনতি পাবে ?

কিবরিয়া আর রশিদ, দু'বন্ধু মিলে হিসেব কষে দেখে, অন্য কোনো বাসায় এরকম বেসমেন্টের একটা পুরো রুম ভাড়া করলেও মাসিক হিসেবে এখানে যত দিতে হবে তার অর্ধেকও খরচ হবে না | - পরদিন সন্ধ্যের আগেই রশিদের সহায়তায় কিবরিয়া অদুরেই আরেকটা ফিলিপিনো বাসার বেসমেন্টে চলে গেল |

এমন ছোটলোকি আচরণের কথা শুনে রশিদদের বাড়িওয়ালার বিস্তারিত পরিচয় জানতে আমার মনটা উথলা হয়ে উঠলো | কিবরিয়াকে প্রশ্ন করলাম, ওই বাঙালি ভদ্রলোকের নাম কি, কি করেন, এসব জানো?

- হ্যা, জানি আন্কেল, এরকম মানুষের নাম কি কখনো ভোলা যায়?

নাম কি তাঁর?

- 'স্বপন সাহেব, আপনাদের বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার, পিএইচডি করা' - এক নি:শ্বাসে সব পরিচয় বলে ফেললো |

'বলো কি? স্ব..প..ন?' - আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা পড়ে যাবার অবস্থা ..

- হ্যা, স্বপন সাহেব, আপনি কি তাঁকে চেনেন আন্কেল ?

আগে বলো, উনি কি আমাকে চেনেন?

- আপনাকে নিয়ে তো কথা হয়নি .. তবে আপনাদের বয়সী ..

চিপচিপে, শ্যামলা ..? মোটা কাঁচের চশমা ..?

- হ্যা, হ্যা, ঠিক বলছেন আন্কেল ... উনিই উনিই ..

সেই থেকে মাঝে মাঝেই কিবরিয়ার সাথে টেলিফোনে কথা হয় আমার | মাঝে একবার দু'দিনের জন্য আমার এখানে (এডমন্টন, কানাডা) বেড়াতেও এসেছিল ছেলেটা | ঘনিষ্ট যোগাযোগে অনেকটা আপন চাচা-ভাতিজার সম্পর্ক আমাদের | জীবনের ছোটখাটো বিষয়ও আমাদের পরিবারের সাথে ও শেয়ার করে | খুব খোলা মনের | ভালো লাগে তার সাথে কথা বলে | ওর সাথে এখানে প্রথম যোগাযোগের পর আরো বছর দেড়েক দেখতে দেখতেই কেটে গেল।

আরেকদিনের কথা | কিবরিয়া আমাকে ফোনে জানালো, সেই বাড়িওয়ালা, মানে আমার এক সময়ের সহপাঠি স্বপন, ক'দিন আগে এক সন্ধ্যায় ওর বাসায় এসে হাজির | 

অবাক হয়ে (কিবরিয়ার কাছে) জানতে চাইলাম, কেনো, স্বপনের আবার কি হলো?

আন্কেল, আর বলবেন না, খুব নরমসুরে অনেকটা অপরাধীর ভঙ্গিতে আমাকে বললেন, ভাই, আপনার সাথে কয়েকটা মাসের জন্য আমাকে থাকতে দেবেন ? 

তারপর? - বিদ্যুত স্ফুলিঙ্গের মতো আমার আগ্রহের শিখা জ্বলে উঠলো আরেকবার |

তারপর আর কি, উনার কথা শুনে আমি নিজেই আকাশ থেকে পড়লাম | ভদ্রলোক বলেন কি? উনি না হাফ এ মিলিয়ন ডলারের বাড়ির মালিক ! কোন দু:খে আমার মত একজন নতুন ইমিগ্রেন্ট, যাকে উনি নিজেই কিছুদিন আগে তাঁর বাসার বেসমেন্ট থেকে একপ্রকার তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, এর সাথে রুম শেয়ার করতে এসেছেন সেই মানুষটি | হিসাব মেলাতে পারি না কোনমতেই |

- আহা, বেচারা হয়তো কোনো সমস্যায় পড়েছে | আমার বন্ধু মানুষ | অন্তত দু'একটা রাতের জন্য হলেও তাকে ..

আনেক কাল, আমি উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি | বিশেষ করে আপনার বন্ধু জানার পর তাঁর উপর কোন রাগও মাথায় রাখিনি | তাঁকে বরং বলেছি দু'এক রাত থাকলে থাকতে পারেন | কিন্তু, উনি থাকতে চাচ্ছিলেন পুরো ছ'মাসের জন্য | ছ'মাস তো অনেক  লম্বা সময় ..

- তা ঠিক, তো.., তুমি জানতে চাইলে না, ছ'মাস কেন?

উনি নিজ থেকে না বললে আমি তো ওভাবে জানতে চাইতে পারি না ..

- ঠিক বলেছো, ঠিক বলেছো, তুমি আসলেই খুব স্মার্ট ছেলে ভাতিজা ..

আমি উনাকে বলেছি, আমাকে দু'একদিন সময় দিন, একটু ভেবে দেখি | আপনাকে ফোনে জানাবো আমার সিদ্ধান্ত | আপনার কষ্ট করে এখানে আসার দরকার নেই |

কিবরিয়া বলে চলেছে, উনি চলে যাবার পর রশিদকে ফোন দিয়ে জানলাম, স্বপন সাহেবের সাথে নাকি তাঁর স্ত্রীর প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হয়, এবং মাঝে মাঝেই তা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায় | এমনই এক ঘটনায় উনি টেবিল ফ্যানের স্টেন্ড খুলে তাঁর স্ত্রীকে মারধর শুরু করলে তাঁদের বারো বছরের মেয়েটা ভয় পেয়ে পুলিশে ফোন করে দেয় | পুলিশ এসে হাতেনাতে স্বপন সাহেবকে ধরে ফেলে, এবং তাঁকে তাত্ক্ষনিক নির্দেশ দেয় ছয় মাসের জন্য তাঁর বাড়ির দু'শ গজের মধ্যে না ঘেঁষতে |

- ইস, বেচারাতো তাহলে ভীষণ বেকায়দায় পড়ে গেছে ..

'সেদিনই উনি একটা হোটেলে উঠেছেন | তারপর রশিদের কাছ থেকে আমার ঠিকানা নিয়ে আমার সাথে রুম শেয়ার করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন | কারণ, হোটেলে নাকি প্রতিদিন নব্বই ডলার করে গুনতে হচ্ছে |' - কিবরিয়া বললো |

পুরোনো বন্ধু, স্বপনের মতো স্মার্ট মানুষের এমন কুপোকাত অবস্থা দেখে মনটা ভারী হয়ে গেলো |

No comments:

Post a Comment