Monday, January 29, 2018

বাঙালির বাংলা হাসি / হায়াৎ মামুদ

বাঙালির বাংলা হাসি ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একই ব্যতিক্রমী বই। নামে বইটি কৌতুকের। কার্যকরণে এটি শুধু
কৌতুক নয়, কৌতুকের মাধ্যমে বাংলা শেখার জন্য রচিত একটি ব্যতিক্রমী বই। ব্যাকরণ জটিল এবং কাঠখোট্টা বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। তাই অনেকে ব্যাকরণকে এড়িয়ে চলেন। বাংলা ব্যাকরণ নাকি আরো জটিল। আসলে বিষয়টি ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, আগ্রহ এবং অনুশলীনের উপর নির্ভরশীল। কঠিন বলে অনেকে বাংলা ব্যাকরণ এড়িয়ে যান। ফলে মাতৃভাষাতেও প্রচুর ভুল করে বসেন। তবে, ব্যাকরণ যে রীতিবদ্ধ পঠন ও সূত্রবদ্ধ বর্ণন এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই ব্যাকরণ পাঠ অনেকের কাছে জটিল মনে হয়। কিন্তু লেখক এই বইটিতে বাংলা ভাষা, বানান ও ব্যাকরণ শেখার কাজটি হাস্যকৌতুকের মাধ্যমে অত্যন্ত সহজ ভাষায় উপস্থাপন করছেন। 

বাংলা বানান, বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা ভাষা নিয়ে লিখিত ‘বাঙালির বাংলা হাসি’ শিরোনামের কৌতুকগ্রন্থের কৌতুকগুলো পড়লে শুধু হাসি নয়, হাসির সঙ্গে এসব বিষয় সম্পর্কে পাঠকের মনে নতুন ধারণার সৃষ্টি হবে। অর্জিত হবে নতুন অভিজ্ঞান। একশ আশিটি ছোটো ছোটো কৌতুক নিয়ে বইটি রচিত। অধিকাংশই মৌলিক কৌতুক। প্রত্যেকটা কৌতুক ভিন্ন আমেজে ভিন্ন উপদেশ ও ভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে উপস্থাপিত। কৌতুকের সঙ্গে শেখা আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির উত্তম সংযোজন হিসেবে চিহ্নিত। এখানে লেখক এই কাজটি উত্তমরূপ করতে সক্ষম হয়েছেন। আমি মনে করি এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে কৌতুকের জগতে অনবদ্য একটি সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে। 

কেউ যদি বাংলা ব্যাকরণ ও বাংলা বানান পড়ে হাসতে হাসতে উদ্বেল হয়ে যেতে চান শিক্ষার মাঝে, অভিভূত হয়ে পড়তে চান নতুনত্বের কলহাস্যে, বন্ধুদের মাঝে মধ্যমণি হয়ে থাকতে চান  নির্মল হাসির আচ্ছাদনে, তাহলে ‘বাঙালির বাংলা হাসি’ বইটি পড়া প্রয়োজন। হাসির মাঝে শুদ্ধ বাংলা শিখে নিজেকে বিশুদ্ধ করার উত্তম বই এটি। অসাধারণ এই বইটি কৌতুকের রাজ্যে ভিন্ন আমেজ এনে দিয়েছে। বইটি পড়লে কী মজা পাবেন, কত হাসি আপনাকে হাসতে হবে, তা আমি এর পা-ুলিপি পড়ে অনুধাবন করেছি। গ্রন্থটির প্রতিটি কৌতুক যে হাস্যরস এবং শিক্ষা আমার মনে উচ্ছ্বলতা দিয়েছে, তা সত্যি প্রশংসনীয়। আমি গ্রন্থটির লেখক ড. মোহাম্মদ আমীনকে এমন একটি বইয়ের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। 



বইটির ভূমিকালেখনোত্তর পা-ুলিপি পড়ে আমি ইচ্ছেমতো হেসেছি, মানে হাসতে হয়েছে। পাঠকবৃন্দ, আমার দৃঢ়বিশ্বাস। আপনারও না- হেসে পারবেন না। বইটি পড়–ন, হাসুন আর বাংলা শিখুন।  আশা করি ভালো লাগবে। আমারও ভালো লেগেছে। বইটির প্রকাশক, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা। পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ২০০-২০২ নম্বর স্টলে।

Saturday, January 27, 2018

জর্জ ওয়াশিংটন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প / অধ্যাপক ড. টিআই চৌধুরী

বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্ব ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই, যে দেশটি
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে থাকতে পারে। পৃথিবীর নানা দেশে মার্কিন হস্তক্ষেপ বিষয়টিকে আরো গুরুত্ববহ করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও মনে করে, পৃথিবীর সব দেশে তাদের প্রভাব বলয় থাকা চায়। এই প্রভাব বলয়ের মাধ্যমে দেশটি তাদের রাষ্ট্রীয় সমৃদ্ধিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এই লক্ষ্যে প্রতিষ্টার পর হতে এই পর্যন্ত যারাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে বিশ্বরাজনীতির পরিবলয়ে পুরো পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে প্রথম ক্ষমতাধর প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, অনুরূপ চেষ্টা করেছেন এবং সহজে হতে না পারলে জোর করে প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছেন। কাজেই রাজনীতি, বৈশ্বি আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ড, ধর্মীয় ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিব্যাপন সামরিক শক্তি-সহ নানা কারণে সারা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ব্যাপকভাবে পরিচিত এবং আলোচিত; কোথাও বা প্রশংসিত আবার কোথাও বা প্রণ্ডভাবে সমালোচিত। আমেরিকার রাজনীতিক সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও তাদের প্রায় সিদ্ধান্ত বিশ^কে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়শীল তুলনামূলকভাবে কম ক্ষমতাধর দেশগুলিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও আমেরিকার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক প্রভাবে আমেরিকা যত শক্তিশালী হচ্ছে, দেশটির প্রেসিডেন্টদের গুরুত্ব পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও তত বিস্তৃত হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁকে নিয়ে জানার কৌতুহলও প্রসারিত হচ্ছে। প্রায় সবাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানা-অজানান নানা বিষয়ে জানার জন্য আগ্রহী। এই অবস্থায় বাংলাদেশের জনগণের মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রবল আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। বিশ^রাজনীতিকে প্রভাবিত করে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জীবনী আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাজনীতিক বলয়েও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের নিয়ে সাধারণ্যের কৌতুল নিবৃত করার লক্ষ্যে জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত সবার জীবনীকে বিষয়স্তু করে গ্রন্থটি রচনা করা হলো
এটি একটি গবেষণামূলক জীবিনী গ্রন্থ। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনী গ্রন্থটির মূল বিষয়বস্তু। আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্ট কেমন ছিলেন, কেমন ছিল
তাঁদের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন, কীভাবে ধাবিত হয়েছে তাঁদের রাজনীতিক চিন্তা, প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিক চিন্তা দলীয় ভাবনার সম্পর্ক, টানাপোড়েন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা, বশ্বায়নিক দৃষ্টিভঙ্গি, ক্ষমতার পালাবদলে মার্কিন প্রশাসনের আদর্শিক পরিবর্তন এবং বিশ্বভাবনার অন্তর্নিহিত রূপ প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি বিষয় নিয়েও গ্রন্থটিতে আলোচনা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টগণের শৈশবকাল, শিক্ষা, পারিবারিক ঐতিহ্য, জীবনের বৈচিত্র্যময় ঘটনা, সুনাম-দুর্নাম ইত্যাদি বিষয়কেও যথাপ্রয়োজেন বিধৃত করা হয়েছে। সহজ সরল ভাষায় আমেরিকার ৪৫ জন প্রেসিডেন্টের জীবনী নিয়ে পরিবেশিত বইটি পড়লে প্রতিষ্ঠার পর হতে এই পর্যন্ত আমেরিকার রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সামরিক গুরুত্ব, সমাজ ব্যবস্থা এবং বিশ^রাজনীতিতে আমেরিকার ভূমিকার স্বরূপ সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানা যাবে
বিসিএস-সহ যে কোনো প্রতিযোগতামূলক পরীক্ষার অংশগ্রহণকারীদের জন্য বইটি অত্যন্ত মূল্যবান সংগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হবে। অধিকন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আমেরিকা সম্পর্কে অভিজ্ঞান সঞ্চয়ে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ এবং গবেষকবৃন্দের কাছেও এটি একটি মূল্যবান সহায়কগ্রন্থ হিসেবে গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। একই মলাটে আমেরিকার ৪৫ জন প্রেসিডেন্টর জীবনী বাংলা ভাষায় নানা বৈচিত্র্যময় তথ্যসহ জানার জন্য বইটির বিকল্প নেই। আশা করি বইটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার্থী, গবেষক, শিক্ষক এবং আগ্রহী সবার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে।

বইটির প্রকাশক : শোভা প্রকাশ।
পাবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ১৮ নম্বর প্যাভিলিয়নে।

Tuesday, January 23, 2018

অর্হণা উপন্যাসের মুগ্ধতা / ড. মোহাম্মদ আমীন

অর্হণা
*****
স্যমন্তক সিরিজের দ্বিতীয় উপন্যাস অর্হণা একটি অসাধারণ উপন্যাস।মনপ্রাণস্পন্দিত ঘটনা, খ্যাতিমান চরিত্রবর্গ,
চরিত্রসমূহের সরব উপস্থিতি, রাজসিক আলোচনায় সর্বজনীন হিত, সাড়ম্বর দৃশ্যপট, দৃশ্যপটের মনোহর নৈসর্গিকতায় শহুরে বিমোহন, দলিতদের প্রতি মমতা, অতি স্পর্শকাতর কিছু সম্পর্ক, হৃদয় আলোড়িত জ্ঞানগর্ভ কথোপকথন, বুদ্ধিমত্তার অপূর্ব নিদর্শনপ্রসূত দার্শনিক উপলব্ধি, মনোবৃত্তিক উদারতায় হৃদয়ভিত্তিক জটিলতার স্বরূপ, প্রেম-ভালোবাসার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিউরে তোলা পরিঘটনার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ সবাইকে মুগ্ধ করবে।
অর্হণা যিনিই পড়ুন, মোহিত হবেন বিহ্ববল প্রকৃষ্টতায়, অভিভূত হবেন সোল্লাস প্রাপ্তির মাদকীয় ভাবনায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রায় পুরো পৃথিবী এই উপন্যাসের ক্ষেত্র। উভয় বাংলার কালজয়ী কবিসাহিত্যিকগণ এই উপন্যাসের চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের নামকরা কয়েকজন খ্যাতিমান সাহিত্যিক।
উপন্যাসটি কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তর লিখে বা বলে জানানো যাবে না। ভাষা মানুষকে এখনো এমন হাতিয়ার দিতে পারেনি, যদ্দ্বারা মানুষ তার সব উপলব্ধিকে কেবল বাক্য বা মুখ দিয়ে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে। তেমনি অর্হণা পড়লেও পাঠকের অনুভূতির অনুভবে সঞ্চারিত আবেশরাশিকে সম্পূর্ণরূপে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। এককথায় বলা যায়, অর্হণা অসাধারণ হৃদয়কাড়া একটি উপন্যাস। অর্হণা শুধু উপন্যাস নয়, পাঠকের তীর্থভূমি।
‘অর্হণা’রূপ উপন্যাসের তীর্থক্ষেত্র থেকে আপনি পেতে পারেন সাহিত্যের নির্ঝর সমৃদ্ধি, বিমল মুগ্ধতা। পরিচিত হতে পারেন বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে। বইটি পড়লে পাঠক সত্যিকার উপহার ও ঐশ্বর্য্যময় সম্পদে বিভূষিত হওয়ার মোহনায় আত্মভোলা হওয়ার বিমল প্রশান্তি পাওয়া যাবে।

Sunday, January 14, 2018

ভালোবাসা দিবসে উপহারের জন্য ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ দুটি বই / শ্রাবন্তী নাহা অথৈ

বইয়ের চেয়ে উত্তম উপহার এবং ভালোবাসার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ আর নেই। আর এই দুটির সমন্বয় যদি ঘটানো যায় তাহলে যে কারো জীবন হয়ে ওঠে মধুর এবং ভালোবাসাময়। জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গীয় প্রাপ্তির চেয়ে প্রত্যাশিত সুখের বিরল উৎস। প্রিয়জন প্রত্যেকের  আছে, প্রত্যেকের চাওয়াপাওয়া এবং রুচি বা ইচ্ছা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন। কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে এবং বস্তু হিসেবে বইয়ের ক্ষেত্রে সবার ইচ্ছা অভিন্ন। ভালোবাসা পেলে যে ব্যক্তি খুশি হয় না সে পশুও নয়, জড়; মরা লাশ। বই পেয়ে যে আপ্লুত হয় না, সে লাশের চেয়েও ঘৃণ্য। তবে বই হতে হবে প্রিয়জনের মনকে নাড়া দেওয়ার মতো। আমি এখানে এমন দুটি বই নিয়ে আলোচনা করব, যে বই দুটি আপনার প্রিয়জনকে দিলে আপনার প্রতি শুধু ভালোবাসা নয়, গভীর কৃতজ্ঞতার  নিবিড় আবেশে আপনাকে কাছে পেতে চাইবে, বহুগুণ  বেড়ে যাবে পরস্পর প্রীতি। কারণ বই দুটিতে এমন বিষয় আছে, যা ভালোবাসার মূল্য কী এবং কীভাবে, কোথায় কাকে ভালোবাস দিতে  হয় এবং কীভাবে তা স্থায়ী করা যায়- সেটিই উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের আচরণে তুলে ধরা হয়েছে।

 ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা
 ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা . মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি গল্পগ্রন্থ গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার আগে এর একটি গল্প ফেসবুকে প্রকাশিত হয়। গল্পটি ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফেসবুক
ভাইরাল হয়ে  চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্যার আমাকে বিয়ে করুন নামের গল্পটি দিয়ে অনেকগুলি চ্যানেল ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করে। অর্থনীতির অধ্যাপক সেলসম্যান এবং বউশিরোনামের গল্পটি ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার বোদ্ধামহল গল্পের নতুন আস্বাদন পায় যেন।  আমি গল্প দুটি পড়ে এতই বিমুগ্ধ হয়ে পড়ি যে, আমি আপনাদের জন্য এই লেখা লিখতে অনুপ্রাণিত হলাম। এই বইয়ের ভালোবাসার  গল্পগুলি পড়ে আমার মনে গল্প সম্বন্ধে যে ধারণা ছিল, তা পাল্টে গিয়ে নতুন একটা ধারণা সৃষ্টি করল। গল্প শুধু গল্প নয়। জীবন, জীবনটাই গল্প। আর একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পারলাম, লিখতে জানলে যে কোনো সাধারণ বিষয়ও অসাধারণ হয়ে উঠে। যেমন পরিবেশনার গুণে সাধারণ খাবার হয়ে ওঠে তৃপ্তির চূড়ান্ত অবগাহন।

ভালোবাসা কী এবং ভালোবাসা দিয়ে জীবনকে কীভাবে বদলে  দেওয়া যায় তা আমি এই বই পড়ে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। ভালোবাসা জীবনের জন্য অপরিহার্য। যে জীবনে ভালোবাসা নেই সে জীবনে যেন কিছু  নেই। এই বইয়ে  ভালোবাসার মাধ্যমে জীবনগড়ার প্রতিটি দিক, প্রতিটি ক্ষণ এবং
প্রতিটি বিষয় গল্পে গল্পে তুলে আনা হয়েছে জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখলেও এমন লেখা যায় না, অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নিরীক্ষণ করতে হয় অনুভবের বাস্তবতায় স্বপ্নকে টেনে নামাতে হয় জীবেনর কানায় গল্পসমূহ পড়লে বোঝা যায়, লেখক তা- করেছেন এবং ভালোবাসাকে খুব ভালোভাবে প্রেমময় অনুভবে নিরীক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন গল্পসমূহের ভাষা এত সহজ এবং শব্দচয়ন এত মনোরম যে, পড়লে মন বিগলিত হয়ে যায়। যে কোনো মন তা যতই কঠিন হোক না কেন, নরম হয়ে যায়। গল্পগুলির  ভাষা ভালোবাসার মতোই প্রাঞ্জল।  গল্পগুলিতে মুগ্ধতা যেন হৃদয়ের আবেগে তাড়িত হয়ে প্রেমে প্রেমে একাকার হয়ে গেছে অল্পকথায় অনেক বেশি প্রকাশের ক্ষমতা, ছোটো কথায় ভালোবাসার সাহসী প্রকাশ এত ঋদ্ধ  যে, গল্প শেষ না করে কোনোভাবে ছাড়া যায় না এমন অনুভূতির জন্যই হয়তো বইকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ভালোবাসাকে বলা হয়েছে স্বর্গীয়।
অসাধারণ ২০টি গল্প নিয়ে সজ্জিত এই বইটি পড়লে পাঠক এবং পাঠকের উত্তরসুরী- সবার বিবেক ভালোবাসার মাধুর্যে আনন্দ আর মমতার ঔদার্যে সবার মন বিকশিত হয়ে উঠবে। পরস্পরের প্রতি সৃষ্টি হবে স্নেহপ্রেমপ্রীতি এবং উদার সহানুভূতি। ভালোবাসা দিয়ে কীভাবে একজন দুষ্ট ছেলেকেও কিংবা অবাধ্য বন্ধুকেও নিজের একান্ত ভালোবাসার অানুগত্যে পরিণত করা যায়, তার কৌশল এই বইয়ে বাস্তব গল্পে বিধৃত করা হয়েছে। বইটি পাবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয়-এর স্টলে। দাম মাত্র ১২০ টাকা। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন।  আমি ভালোবাসা দিবসে আপনার প্রিয়জনকে বইটি উপহার দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ এর চেয়ে ভালো বই ভালোবাসা দিবসের জন্য আর হয় না।

তিনে দুয়ে দশ
‘তিনে  দুয়ে দশ’ ড. মোহাম্মদ আমীন-এর লেখা একটি উপন্যাস। যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো বয়সের সিনিয়র, মুরব্বি,
গুরুজন বা বয়স্কদের প্রতি কোনো জুনিয়র বা শিশুকিশোর কোনো উপহার দিতে চাইলে ‘তিনে দুয়ে দশ’ উপন্যাসের চেয়ে আর কোনো ভালো উপহার হতে পারে না।মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, সব পর্যায়ের অগ্রজ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা,  শিক্ষক-শিক্ষিকা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, সিনিয়র নেতা প্রভৃতিসহ যে কোনো মুরব্বি ও  বয়স্ক গুরুজনকে যদি এমন কোনো উপহার দিতে চান, যে উপহার পেলে তিনি খুশি হবেন এবং আপনার প্রতি তার ভালোবাসা, দরদ, মায়ামমতা, স্নেহ, সহানুভূতি, ধৈর্য, বিবেচনাবোধ প্রভৃতি বেড়ে যাবে; তাহলে আমি বলব আপনি, তাকে ড. মোহাম্মদ আমীন স্যারের লেখা ‘তিনে দুয়ে দশ’ উপন্যাসটি উপহার দিন। ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়, পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা ভালোবাসা দিয়ে আদায় করা যায় না- এটিই বইটির মূল্য বিষয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখিত এই বইটি হতে পারে ভালোবাসা দিবস-সহ যে কোনো দিবসে  যে কোনো বয়সের এবং যে কোনো সম্পর্কের প্রিয়জনকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। 

এটি একটি অনবদ্য উপন্যাস। অনবদ্য বলার কারণ আছে। এটি শুধু কথার কথা নয়। নিজের অভিজ্ঞতা হতে লিখিত এই উপন্যাসটি শিশুকিশোর হতে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য উপযোগী এবং দ্রুত মননশীলতার পরিবর্তনের এক যাদুকরি শক্তি রয়েছে। এই উপন্যাসের কাহিনী বিরল ভালোবাসার অনন্ত মহিমা যেন। যা সবার মনে দাগ কাটতে সক্ষম। শিশু-কিশোরদের মনমানসিকতাকে আদর্শ চেতনায় জাগ্রত করতে হলে  বয়স্কদের কী করতে হবে, কেমন হতে হবে তাদের আচরণ, কীভাবে  তাদের মূল্য দিতে হবে প্রভৃতি ছাড়াও এই বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক সমাজের কর্তব্য কী, তা অতি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় অনুপম এক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আবার জ্যেষ্ঠদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধাে এবং আনুগত্য পেতে হলে অনুজদের কী করতে হবে তাও এই উপন্যাসে বাস্তব ঘটনার মধ্য দিয়ে বর্ণিত হয়েছে। এবার বইটিতে কী আছে তা সংক্ষেপে দেখা যাক :

লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন টিউশনি করতেন। ওমর সুলতান নামের তাঁর এক ছাত্র তিনি পড়াতেন। ওমর সুলতান ছিল খুব ডানপিটে, দুষ্ট, বেপরোয়া, যথেচ্ছাচারী, উচ্ছৃঙ্খল বেয়াদব। সে গৃহশিক্ষকের নিকট থেকে প্রতিমাসে বেতনের ৩০% কমিশন নিত। শিক্ষকের সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ়, অশালীন ও অপমানজনক আচরণ করত। সহপাঠীদের খুব
তুচ্ছ ভাবত।বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গেও খুব খারাপ ব্যবহার করত। ওমরের পিতা ছিলেন খুব প্রভাবশালী ছিলেন। তাই স্কুলের শিক্ষক বা স্কুল কমিটি ওমরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করত না। ওমরের এমন অসভ্যতার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে কোনো শিক্ষক তাকে পড়াতে আসত না। এলেও কয়েক দিনের মধ্যে অতীষ্ঠ হয়ে পালিয়ে যেত। আস্তে আস্তে এমন এক অবস্থা উপনীত হয়, ওমর সুলতানকে পড়ানোর জন্যকোনো শিক্ষকই পাওয়া যাচ্ছিল না। স্কুলের শিক্ষক এবং সহপাঠীরাও ওমরকে এড়িয়ে চলত। এভাবে সে খুব একা হয়ে পড়ল। যত এক হয়ে পড়ছে ততই সে বেপরোয়া হয়ে ওঠছে। মা-বাবার সঙ্গেও সে খারাপ ব্যবহার করত। বাবাকে বাবা ডাকত না। ডাকত ডিআইজি সাহেব। লেখকের এক বন্ধু, লেখককে ওমরের গৃহশিক্ষক হওয়ার প্রস্তাব করে। লেখক ওমরের এসব ঘটনা জানতেন না। তাই তিনি রাজি হয়ে যান। কিন্তু ওমরকে পড়াতে গিয়ে প্রথম দিনেই লেখক হতভম্ব হয়ে পড়েন। ওমরের আচরণ  খুবই রূঢ়, অশালীন, অভদ্র, অসহনীয় এবং অপমানজনক। ওমরের মা এসে লেখককে কেঁদে কেঁদে ওমরের বিষয়গুলি জানায়। পড়াতে গেলে অন্যান্য শিক্ষকদের মতো লেখকের কাছ থেকেও ওমর সুলতান বেতনের ৩০% কমিশন চেয়ে বসে। লেখক অপমানিত বোধ করে ওমর সুলতানকে মারতে গিয়েও থেমে যান। তিনি মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন- তিনি দেখবেন ওমর সুলতান কতদূর যেতে পারে। তিনি যে কোনোভাবে হোক ওমরকে পরিবর্তন করার  তিনি ওমরকে উচ্ছৃঙ্খল জীবন থেকে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় নিয়ে নেন। তাই ‍ওমরের সব অপমান কৌশলে হজম করে নিতে থাকেন। একদিন ওমর, তার শিক্ষক তথা লেখককে তার বালিকা-বান্ধবীর জন্য প্রেমপত্র লিখে দিতে বলে। লেখক তাও হজম করে নিয়ে প্রেমপত্র লিখে দেন। তবে কৌশলে তিনি ওমর সুলতানকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।  ক্লাসের সবার নিচে ছিল
ওমরের স্থান। লেখক তার শিক্ষকের ভার নেওয়ার পর ওমর প্রথম কয়েক মাস আরো বেশি উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্য শিক্ষকের মতো লেখক তাকে ছেড়ে চলে যাননি। ভালোবাসা দিয়ে ওমরকে পরিবর্তনের প্রত্যয়ে আরো দীপ্ত হয়ে ওঠেন। আস্তে আস্তে ওমরের পরিবর্তন আসতে থাকে। পরের বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় ওমর শেষস্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়। কীভবে এক বছরের মধ্যে এমন পরিবর্তন সম্ভব হয়েছিল, তা এই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা কিশোর উপন্যাসটি কিশোরদের শুধু আনন্দ দেবে না, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার অনুপ্রেরণাও জোগাবে। সর্বোপরি, কিশোরদের সঙ্গে মা-বাবা পরিবেশের মধ্যে কেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত, কেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত আমাদের প্রত্যেকের প্রাত্যহিক, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রী জীবনে তাও অনবদ্য বাস্তবতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। 
মূলত ভালোবাসা কী, কীভাবে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করা যায়, অতি খারাপকেও ভালো লোকে পরিণত করা যায়, অতি খারাপ ছাত্র বা সন্তানকেও মেধাবী করে দেওয়া যায়; সেটাই এই গ্রন্থে লেখক তার জীবনের একটি ঘটনা দিয়ে উপন্যাসে উপন্যাসে বিধৃত করেছেন। আমি মনে করি, এটি ভালোবাসা দিবসসহ প্রত্যেক দিবসে, বিশেষ করে পিতামাতা ও মরুব্বিদের প্রতি এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি হতে পারে শ্রেষ্ঠ উপহার। লেখকের জীবন থেকে নেওয়া এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে পুথিনিলয়। পাওয়া যাবে  অমর একুশে গ্রন্থমেলার পুথিনিলয় স্টলে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন। দাম মাত্র ১২০ টাকা।